বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী
জন্ম :
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরের আলো ফোটার আগেই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ঐতিহাসিক বাড়িটিতে ঘাতকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল এবং বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। সেই কালরাতে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিব ছাড়াও তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর নিকট আত্মীয় সহ মোট ২৬ জন সেদিন শহীদ হন।
বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে গিয়ে ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁর সামরিক সচিব জামিল উদ্দীন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
কেবলমাত্র তাঁর দুই মেয়ে - শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
সেই কালো রাতে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন , তাঁদের কয়েক জনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
জন্ম :
শেখ মুজিবের বাড়িতে নয়জনকে হত্যা করা হয়েছিল। লাশগুলো (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর আলাউদ্দিন আহমেদ এর প্রদত্ত রিপোর্ট মতে) যে অবস্থায় পাওয়া যায়:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করতে সেনা সদর থেকে ঢাকা সেনানিবাসের তৎকালীন স্টেশন কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ হামিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৫ আগস্টের ঘটনায় নিহতদের লাশ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
দুটি ট্রাকে করে ১৮ টি লাশ দাফনের জন্য আনা হয়।
আগস্ট মাসের তাপ ও আর্দ্রতায় কিছু লাশ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্যান্যদেরকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অতঃপর অনির্দিষ্টকালের জন্য কবরস্থানটিতে দাফনের কাজ বন্ধ ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
১৬ আগস্ট ১৯৭৫ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধুর লাশ সেনাবাহিনীর একটি ট্রাকে করে ক্যান্টনমেন্টে আনা হয়। বঙ্গবন্ধুর শরীরে মোট ১৮ টি বুলেটের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। একটি বিএএফ (বাংলাদেশ এয়ারফোর্স) হেলিকপ্টারযোগে লাশ দাফনের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃতদেহের গোসল ও জানাজা দেওয়া হয়। জানাজায় বঙ্গবন্ধুর চাচাসহ ডজনখানেক লোক শরিক হন! একটি অস্থায়ী চৌকি বসিয়ে কবরটি পাহারার জন্য রক্ষী মোতায়েন করা হয়।
বনানী গোরস্থান: সারি নম্বর ৭–এ যাঁদের কবর দেওয়া হয় :
নোট: ৯ নম্বর কবরের নাঈম খানের লাশ লে. আবদুস সবুর খানের (এনওকে) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত সহকারী এএফএম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মুজিব হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারকার্য শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি
মুজিব হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়
হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়
চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের প্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়। সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগে আসামিদের রিভিউ পিটিশন দাখিল এবং তিন দিন শুনানি শেষে ২৭ জানুয়ারি চার বিচারপতি রিভিউ পিটিশনও খারিজ করেন। এদিনই মধ্যরাতের পর ২৮ জানুয়ারি পাঁচ ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৩৪ বছর পর এ হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হয়।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তারা হলেন:
২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয় ।
১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ।
২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন গ্রেফতার হন ।
২০০১ সালের ২ জুন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবদুল আজিজ জিম্বাবুয়েতে মারা যান বলে কথিত আছে ।
এছাড়াও এখনো ১২ জনের মধ্যে চারজন বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। পলাতকরা হলেন :
যে কাজটি বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীও করার সাহস করেনি, সেটিই করল এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার। পৃথিবীতে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে, ততদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম; তাঁর কর্ম।
দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
তবু নাই ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।
রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবন (বাড়ি ১০, সড়ক ৩২ [পুরোনো], ১১ [নতুন]) এখন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। ১৯৯৩ সালে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করাই শুধু উদ্দেশ্য ছিল না ঘাতকদের; রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও দেশের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এভাবেই একটি পরিবার, একটি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারের নির্দেশক হয়ে ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি নির্জন-নীরব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চিরদিন এমন অন্ধকার থাকতে পারে না, আলো তাই জ্বলছে সেখানে, আবারও হাজার হাজার কণ্ঠে "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু" ধ্বনিত হচ্ছে ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে।