বাংলাদেশের ১ম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ :
১১ এপ্রিল ১৯৭১ – ১২ জানুয়ারি ১৯৭২
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বপ্ন সারথী এবং স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মুজিবকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এসকল কারণে, তাঁকে বাংলাদেশের "জাতির জনক" বা "জাতির পিতা" হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি "বঙ্গবন্ধু", "শেখ মুজিব" এবং "শেখ সাহেব" নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন।
কাজের মেয়াদ :
১১ এপ্রিল ১৯৭১ – ১২ জানুয়ারি ১৯৭২
কাজের মেয়াদ :
১২ জানুয়ারি ১৯৭২ – ২৪ জানুয়ারি ১৯৭৫
কাজের মেয়াদ :
২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
নির্যাতিত-নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট (২৯শে শ্রাবণ, ১৩৮২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার) একদল বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হন। কিন্তু এই মৃত্যু বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করেনি বাঙালি থেকে। তিনি হয়ে উঠেছেন আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জনমত জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান "সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি" হিসেবে নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ (৩রা চৈত্র, ১৩২৬ বঙ্গাব্দ, বুধবার) রাত ৮টায় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদীতীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শেখ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ বোরহানউদ্দিন এই বংশের গোড়াপত্তন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফুর রহমান, যিনি গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন, এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। তাঁর ডাকনাম ছিল "খোকা"। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ভাত, মাছের ঝোল আর সবজি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খাবার। আর তাঁর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল।
জন্ম : ১৭ মার্চ ১৯২০ সাল
জন্মস্থান : টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
পিতা : শেখ লুৎফুর রহমান
মাতা : সায়েরা খাতুন
দাম্পত্য সঙ্গী : বেগম ফজিলাতুন্নেসা
"শেখ মুজিবুর রহমান" নামকরণটি করেন তাঁর নানা শেখ আবদুল মজিদ। টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে শেখ মুজিবের জীবন কাটে দুরন্তপনা করে। মধুমতির ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দল বেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দস্যি বালকদের নেতা।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পিতার বদলিসূত্রে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেরিবেরি নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁর হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে চোখে গ্লুকোমা ধরা পড়ে। ফলশ্রুতিতে, চোখে অস্ত্রোপচার করাতে হয় এবং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্যলাভ করতে বেশ সময় লেগেছিল। এ কারণে তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। সুস্থ হবার পর ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
এ সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং বহু বছর জেল খাটা কাজী আবদুল হামিদ (হামিদ মাস্টার) নামে একজন ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহশিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান নাম মওলানা আজাদ কলেজ) থেকে আই.এ. এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইসলামিয়া কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষকে একত্রিত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানার্থে "বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ" তৈরি করে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি কক্ষটির সম্মুখে তাঁর আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।
ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন : ১৯৪২ সালে
আই.এ. পাশ করেন : ১৯৪৪ সালে
স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন : ১৯৪৭ সালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার : ১৯৪৯ সালে
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার : ১৪ই আগস্ট ২০১০ সালে
ভারত বিভাজনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন। তবে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি দাওয়ার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই খণ্ডে তাঁর আত্মজীবনী লিখেছিলেন, যেখানে তিনি স্বীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বর্ণনাও দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি তাঁর চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও লিখে রেখেছিলেন। এইসব রচনা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন। তাঁর রচিত বইগুলোর রচনাশৈলীতে সাহিত্যের গুণগতমান খুঁজে পাওয়ায় তাঁকে লেখক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। রচিত গ্রন্থ সমূহ নিম্নরূপ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মৃত্যুর আগে ও পরে যে সব উপাধি ও পুরস্কার পেয়েছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাধি ও পুরস্কারের বর্ণনা নিচে প্রদান করা হল।
ডক্টর অব লজ ডিগ্রি
২০২৩ সালের ২৯শে অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরণোত্তর "ডক্টর অব লজ" ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এ ডিগ্রি গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর হাতে ডিগ্রি হস্তান্তর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৩ তম ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে এই সম্মানসূচক উপাধি প্রদান করা হয়। সর্বপ্রথম ১৯২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলরকে "ডক্টর অব লজ" প্রদান করা হয়।
"মুজিব বর্ষ" হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উৎসব। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে ২০২০-২১ খ্রিষ্টাব্দকে "মুজিব বর্ষ" হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ২৬শে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত এ বর্ষ উদযাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মুজিব বর্ষের সময়সীমা ১ম দফায় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং সর্বশেষ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।