প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। শৈশবে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার একটি পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন শেখ হাসিনা। পুরোনো ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। এরপর বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে তাঁরা ৩ নম্বর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন।
১৯৫৬ সালে টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত। ১৯৬১ সালের ১ লা অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন । ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় নামে পরিচিত।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা
জন্ম : ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সাল
মাধ্যমিক পাস : ১৯৬৫ সালে
উচ্চ মাধ্যমিক পাস : ১৯৬৭ সালে
স্নাতক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) : ১৯৭৩ সালে
দাম্পত্য সঙ্গী : ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া
একই বছর (১৯৬৭ সাল) শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণের সুবাদে শৈশব থেকেই সংগ্রামী চেতনার সুমহান উত্তরাধিকার বহন করছেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী বিস্তৃত। অনেক সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়েই পিতার মতো বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে পরাজিত করতে চাইলেও তিনি ফিরে এসেছেন শুধু জনগণের ভালোবাসায়। এ যেন সেই কথারই প্রতিধ্বনি, "তুমি যদি মানুষকে সত্যিই ভালোবাসো, তাহলে তারাও তোমাকে একই রকমভাবে ভালোবাসবে।"
সংগ্রামী নেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ) ছাত্রী থাকা অবস্থায়। তিনি এই কলেজের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
রাজনীতির সূচনা : বদরুন্নেসা কলেজ থেকে
আওয়ামী লীগের সভাপতি : ১৯৮১ সালে
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১৭ মে ১৯৮১ সালে
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত : ১৯৯৬ সালে
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। আওয়ামী লীগেকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি এবং তাঁর দল স্বৈরশাসনবিরোধী দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ১৯৯১ সালে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের তৎকালীন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ শে জুন প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার, ২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারি তৃতীয়বার, ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর চতুর্থবার এবং ২০২৪ সালের ৭ ই জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বপ্ন এখন স্মার্ট বাংলাদেশ
স্মার্ট বাংলাদেশ হলো আওয়ামী লীগ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাফল্যে ভর করেই দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১২ ই ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সর্বপ্রথম "স্মার্ট বাংলাদেশ" গড়ার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সরকার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে — ১.স্মার্ট সিটিজেন, ২.স্মার্ট ইকোনমি, ৩.স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও ৪.স্মার্ট সোসাইটি।" বিস্তারিত...
দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ ই নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং তাঁর জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুতে রাখা হয়। তিনি পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো সনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিন্যুয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও তাঁর দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং ৫ শ'র বেশি মানুষ আহত হন।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বের ফলে দৃশ্যমান গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মেগা প্রকল্প, যেগুলোর সুফল ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মানুষ পেতে শুরু করেছে।
পদ্মা সেতু
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত পদ্মা সেতু হচ্ছে পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। ৪১ টি স্প্যান নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম এ সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কি.মি. এবং প্রস্থ ১৮.১৮ মিটার। ২০২২ সালের ২৫ শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১০ ই অক্টোবর তিনি বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা রেল সেতু উদ্বোধন করেন। বিস্তারিত...
ঢাকা মেট্রোরেল
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে যে রেল ব্যবস্থা নির্মাণ করা হচ্ছে তা ঢাকা মেট্রোরেল বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নামে পরিচিত। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজের মধ্যে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা উত্তর - আগারগাঁও পর্যন্ত এবং আগারগাঁও - মতিঝিল পর্যন্ত অংশের মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন যথাক্রমে ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২২ ও ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৩ সালে। বিস্তারিত...
কর্ণফুলী টানেল
বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো "ওয়ান সিটি, টু টাউন" মডেলে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দক্ষিণ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ৩.৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলটি কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামে পরিচিত। ২০২৩ সালের ২৮ শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুড়ঙ্গ পথটির উদ্বোধন করেন।
বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অ্যাভিয়েশন হাবে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেই লক্ষ্যে প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ৭ ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৪০০মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে অবস্থিত। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্বের ৩৩ তম পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে আগামী বছর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে রূপপুর কর্তৃপক্ষ।
রাজনীতির বাইরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমূহ নিম্নরূপ
সামাজিক কর্মকান্ড, শিক্ষা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সম্মাননাগুলো নিম্নরূপ